করিতে পারি না কাজ,
সদা ভয়, সদা লাজ,
সংশয়ে সংকল্প সদা টলে,
পাছে লোকে কিছু বলে।
আড়ালে আড়ালে থাকি,
নীরবে আপনা ঢাকি,
সম্মুখে চরণ নাহি চলে,
পাছে লোকে কিছু বলে।
হৃদয়ে বুদবুদ মতো
উঠে শুভ্র চিন্তা কত,
মিশে যায় হৃদয়ের তলে
পাছে লোকে কিছু বলে।
কাঁদে প্রাণ যবে, আঁখি
সযতনে শুষ্ক রাখি
নির্মল নয়নের জলে,
পাছে লোকে কিছু বলে।
একটি স্নেহের কথা
প্রশমিতে পারে ব্যথা
চলে যাই উপেক্ষার ছলে
পাছে লোকে কিছু বলে।
মহৎ উদ্দেশ্যে যবে
এক সাথে মিলে সবে,
পারি না মিলিতে সেই দলে,
পাছে লোকে কিছু বলে।
বিধাতা দিছেন প্রাণ
থাকি সদা ম্রিয়মাণ;
শক্তি মরে ভীতির কবলে,
পাছে লোকে কিছু বলে।
সদা — সবসময়।
সংশয় — সন্দেহ, দ্বিধা।
সংকল্প — মনের দৃঢ় ইচ্ছা।
সংশয়ে সংকল্প সদা টলে — মনের দৃঢ় ইচ্ছা পূরণ করায় বাধা তৈরি হয়।
শুভ্র - সাদা, এখানে পরিষ্কার বা অমলিন অর্থে ব্যবহৃত।
যবে — যখন।
প্রশমিতে — উপশম ঘটাতে, নিবারণ করতে।
প্রশমিতে পারে ব্যথা — যন্ত্রণার উপশম ঘটাতে পারে।
উপেক্ষা — গ্রাহ্য না করা, অবহেলা করা, গুরুত্ব না দেয়া।
ছল — ছুতা, ওজর।
ম্রিয়মাণ — কাতর, বিষাদগ্রস্ত।
এ কবিতা পাঠ করে শিক্ষার্থীরা নিঃসংকোচ চিত্তে জীবনপথে পরিচালিত হওয়ার অনুপ্রেরণা লাভ করবে। কে কী বলল তা ভেবে নিজেকে গুটিয়ে রাখার প্রবণতা থেকে তারা মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করবে।
কবিতাটি 'আলো ও ছায়া' কাব্যগ্রন্থ নেওয়া হয়েছে। কোনো কাজ করতে গেলে কেউ কেউ অনেক সময় দ্বিধাগ্রস্ত হয়। কে কী মনে করবে, কে কী সমালোচনা করবে এই ভেবে তারা বসে থাকে। এর ফলে কাজ এগোয় না। যাঁরা সমাজে অবদান রাখতে চান তাঁদের দ্বিধা করলে চলবে না। দৃঢ় মনোবল নিয়ে লোকলজ্জা ও সমালোচনাকে উপেক্ষা করতে হবে। মানুষের কল্যাণে মহৎ কাজ করতে হলে ভয়-ভীতি সংকোচ উপেক্ষা করে এগিয়ে যেতে হবে।
কামিনী রায় বরিশালের বাসন্ডা গ্রামে ১৮৬৪ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৮৬ সালে কলকাতার বেথুন কলেজ থেকে সংস্কৃতে অনার্সসহ বি.এ. পাস করে তিনি ওই কলেজেই অধ্যাপনায় নিযুক্ত হন। আনন্দ ও বেদনার সহজ-সরল প্রকাশ ঘটেছে তাঁর কবিতায়। মানবতাবোধ ও নৈতিকতাকেও তিনি তাঁর কবিতার বিষয় করেছেন। তাঁর লেখা ছোটদের কবিতা সংগ্রহের নাম ‘গুঞ্জন’। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ – ‘আলো ও ছায়া', 'মাল্য ও নির্মাল্য', ‘দীপ ও ধূপ”। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে জগত্তারিণী স্বর্ণপদকে ভূষিত করে। ১৯৩৩ সালে তাঁর মৃত্যু হয়।
ক. ‘পাছে লোকে কিছু বলে' শীর্ষক কবিতার বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে তোমার কিংবা তোমার পরিচিত লোকজনের সমস্যা নিয়ে গল্প, নাটিকা বা প্রবন্ধ রচনা কর (একক কাজ)।
খ. তোমার ভিতরকার তিনটি সমস্যা খুঁজে বের করো এবং এই সমস্যাগুলো থেকে বের হয়ে আসার উপায় লেখ (একক কাজ)।